Header Border

ঢাকা, শুক্রবার, ১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ (শীতকাল) ২২.১৫°সে
Headline :
গুম-খুন-পেট্রোলবোমার অপরাজনীতির জন্য বিএনপিকে ক্ষমা চাইতে বললেন তথ্যমন্ত্রী পানির বদলে প্রস্রাব আর চোখে মরিচের গুড়া দিয়েছিল ওসি প্রদীপ নির্যাতিত অসহায় সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে আসার আহবান চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে শোকাবহ উপলক্ষে দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ সোনামসজিদ স্থলবন্দরে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ৩ হাজার ভারতীয়’র দেশে ফিরতে বাধা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বিদ্যুৎ মিস্ত্রিরির মৃত্যু চাঁপাইনবাবগঞ্জে ডিবি পুলিশের পৃথক অভিযানে অস্ত্র ও মাদক সহ গ্রেপ্তার ৪ চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদে বিজিবির ভ্যান, সেলাইমেশিন ও ছাগল বিতরন রাজবাড়ীতে ১০০পিস ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

পানির বদলে প্রস্রাব আর চোখে মরিচের গুড়া দিয়েছিল ওসি প্রদীপ

কক্সবাজারের টেকনাফ থানা পুলিশের বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাসের সাজানো মামলায় দীর্ঘ ১১ মাস ৫ দিন কারাভোগের পর বৃহস্পতিবার জামিনে মুক্ত হন দৈনিক জনতার বাণীর সম্পাদক কক্সবাজারের সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান। তিনি মূলত টেকনাফের আলোচিত ওসি প্রদীপ কুমার দাসের রোষানলের শিকার হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

সাংবাদিক ফরিদ বলেন, ধরুন কারো কাছে ইয়াবা পেয়েছে ১০ হাজার পিস সেটিকে ২ হাজার পিস দেখানোর জন্য অপরাধীর কাছে অর্থ নিয়েছেন আর বাকি ইয়াবাগুলো তিনি নিজেই বিক্রি করেছেন। আবার কখনো কোন লোকের কাছে দেখা যাচ্ছে, কোন ইয়াবা পাননি তার পকেটে হাজার পিস ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে জিম্মি করে ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিতেন। মূলত এসব বিষয় নিয়ে ২০১৯ সালের ২৪ জুন ‘টাকা না দিলে বন্দুক যুদ্ধ দেন টেকনাফের ওসি’ শিরোনামে একটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করেছিলাম। এটাই আমার জীবনের কাল হয়ে যায়। এ সংবাদ প্রকাশের পর ওসি প্রদীপ তার থানার সীমানা ডিঙ্গিয়ে কক্সবাজার শহরে আমার বাসায় একের পর এক অভিযান চালায়। নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। একপর্যায়ে তার ভয়ে জানমাল এবং পরিবারের জন্য ভিটে বাড়ি ভাড়া দিয়ে ঢাকা শহরে পালিয়ে যাই। ঢাকায় আসার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজিপি এবং আমার গণমাধ্যমের বন্ধুদের স্মরণাপন্ন হই। মন্ত্রী মহোদয় আমাকে সার্বিক নিরাপত্তা দেয়ার জন্য তৎকালীন কক্সবাজারের এসপি এবিএম মাসুদ হোসেনকে ফোন দেন। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য সেদিন এসপি মাসুদ ওসি প্রদীপের সকল কুকর্মের বিষয়ে অবগত হওয়ার পরও মন্ত্রী মহোদয়কে বলেছিলেন আমি নাকি মাদকের ব্যবসা করি, আমি নাকি চলমান মাদক-দুর্নীতি বিরোধী অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছি। এভাবে বিভিন্নরকম মিথ্যা তথ্য দেন।

নিজের গ্রেফতারের বিষয়টি জানিয়ে তিনি বলেন, এক পর্যায়ে ঢাকা থেকে টেকনাফের পুলিশ দিয়ে আমাকে ধরে আনা হয়। আমার বিরুদ্ধে একটা গায়েবি মামলা দেখানো হয় যার বাদি আমি চিনি না। ঘটনাস্থল, তারিখ সময় সাক্ষী কোনকিছুরই মিল নেই। এমন একটি মামলায় আমাকে ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ গভীর রাতে ঢাকা মিরপুরের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে সেদিন আমাকে যারা অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে তাদের পোশাক, অস্ত্রসস্ত্র পুলিশের মতো হলেও অনেকের নেমপ্লেট ছিল না। তাদের দেখেও বাংলাদেশের পুলিশ মনে হয়নি। আমি দীর্ঘ দিন ধরে সাংবাদিকতা করছি, কোন পুলিশকে কখনো এত খারাপ হতে দেখিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সকল অর্জনে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা অনস্বীকার্য কিন্তু সেদিন যারা আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল তারা ছিল ওসি প্রদীপের পেশাদার খুনি বাহিনী। তারা মূলত একটা চাঁদাবাজির মামলার ওয়ারেন্টের কথা বলে গ্রেপ্তারি করে। এরপর সারারাত তারা আমাকে বন্দুকযুদ্ধের নামে মেরে ফেলার চেষ্টা চালায়। পরে সম্ভবত ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ক্রসফায়ার না দিয়ে টেকনাফ থানায় নিয়ে যায়।

ওসি প্রদীপ কর্তৃক মধ্যযুগীয় নির্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরে ফরিদুল বলেন, সকালে ওসি প্রদীপ আমাকে দেখার পর তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। আমার চোখ মুখ বেঁধে ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়। ওসি প্রদীপও আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পরে। এসময় তারা আমার দুচেখে মরিচের গুড়া দেয় পাশাপাশি পিন দিয়ে চোখ নষ্ট করার চেষ্টা চালায়। প্লাস দিয়ে নখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা চালায়। হাতে পায়ে এবং মুখে দীর্ঘ সময় মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে আমি পানি পানি করে চিল্লাতে লাগলাম, তখন ওসি প্রদীপ প্যান্টের চেন খুলে পস্রাব এবং বাথরুমের মলমূত্র আমার মুখে লাগিয়ে দেয়। এরপর আধামরা অবস্থায়, আমাকে কয়েকজন মিলে ধরে টেকনাফ মডেল থানার তিন তলায় ঝুলিয়ে রাখা হয়।

ভয়াল দিনটির বর্ণনায় তিনি বলেন, এরপর কিছুক্ষণ আবার আমাকে কুকুরের মত মারধর করে গাড়িতে করে টেকনাফ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে জোড় করে মারধর করে একটা ইনজেকশন দেয়া হয়। সেটা আমি প্রথমে দিতে চাইনি, কেননা আমার সন্দেহ হয় এটা পেইন কিলার নাকি স্লো পয়জন। এরপর পুলিশ ভ্যানে করে আমাকে সোজা ম্যারিন ডাইভের দিকে নিয়ে যায়। সেদিন বিয়ের বহরের মতো পুলিশের গাড়ি ছিল পিছনে। তখন গভীর রাত, আমার হাত পেছনে হ্যান্ডকাপ লাগানো আর চোখ গামছা দিয়ে বাঁধা। তারপর আমাকে গাড়ি থেকে নামানো হয়। মনে হলো আমাকে কাঁচা রাস্তা দিয়ে হেঁটে নেয়া হচ্ছে। এরপর ওসি প্রদীপ হাটু দিয়ে আমার বুকে আঘাত করে। এরপর সে আমাকে বলে, কালেমা পড়ে নে তোর সময় শেষ। এরপর আমি ভয়ে কালেমা পড়া শুরু করি। তখন ওসি প্রদীপ আমার বুকে সজোরে লাথি দেয়। এরপর আবার ঘাড় ধরে গাড়িতে তুলে নেয়। আমি মনে মনে ভাবলাম বিপদ কেটে গেছে, এবার মনে হয় কোর্টে সোপর্দ করবে। কিন্তু তারা সেখান থেকে আমাকে আদর্শ বালিকা ফাজিল মাদ্রাসার পর কবিতা চত্বরে নিয়ে যায়। সেই কবিতা চত্বরে সব সময় অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার হয়। যেটা প্রদীপ বাহিনীর টর্চার সেল। এখানে নিয়ে ফের আমার উপর আরেক দফায় নির্যাতন চালানো হয় এবং বন্দুকযুদ্ধে দেয়ার বিষয়টি বলাবলি করে। কিন্তু উপরের কোন কর্মকর্তার নির্দেশে তারা শেষ পর্যন্ত ক্রসফায়ার দেয়নি। এতে ওসি প্রদীপ খুব রাগান্বিত হয়ে আমার টর্চার করে।

অস্ত্র-মাদক মামলার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, টর্চারের পর কতুবদিয়া আমার বোনের বাসার সামনে নিয়ে যায়। এখানে আমার বোনের বাসায় আমি কিছুদিন আশ্রয় নিয়ে ছিলাম। তারা সেখানে দরজায় নক করে। এরপর আমি আমার বোনের কান্নার আওয়াজ পাই। তখন আমি গাড়ি থেকে চিৎকার করে বলি, আমার মা-বোন কোন অপরাধ করেনি তাদের যেন কোন ক্ষতি না হয়, তাদের কোন কান্নার আওয়াজ যেন আমি না পাই। কিছুক্ষণ পর হুট দেশীয় বন্দুক ছয় রাউন্ড কার্তুজ, মদ, গাঁজাসহ তারা উল্লাস করে। তখন সম্ভবত ভোর এরপর তারা আমাকে নিয়ে শহরের দিকে রওনা করে। এরপর তারা আমাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে নামমাত্র চিকিৎসা দিয়ে আমাকে আবার থানায় নেয়া হয়। এর পরের ঘটনা কমবেশি সবারই জানা।

জেল থেকে শুন্য হাতে বেরিয়ে তিন সন্তান-স্ত্রী নিয়ে ফরিদ মোস্তফার চোখে মুখে হতাশার ছাপ। কোথায় থাকবেন? কিভাবে সংসার চালাবেন তা নিয়ে টেনশনের কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ কাউকে না কাউকে উছিলা হিসেবে প্রেরণ করেন। আমার জন্য আপনারা যা করেছেন তা কালের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে। আমি কতটা অসুস্থ তা ভাষায় বোঝাতে পারবোনা। শারীরিক মানুষিক চতুর্মূখী অসুস্থতা, অভাব অনটন ও টেনশন আমাকে ঘিরে ধরেছে। পুলিশ আমাকে যেভাবে দাগী বানিয়েছে তাতে মনে হয় কক্সবাজারে আমাকে কেউ ঘর ভাড়াও দেবেনা। আমি এখন গৃহহীন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমার ব্যাপারে যেন সুদৃষ্টি দেন। যাতে আমার মামলা এবং শারীরিক চিকিৎসায় সরকার হস্তক্ষেপ করেন। পাশাপাশি ওসি প্রদীপের মতো যারা অত্যাচারী পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

গুম-খুন-পেট্রোলবোমার অপরাজনীতির জন্য বিএনপিকে ক্ষমা চাইতে বললেন তথ্যমন্ত্রী
নির্যাতিত অসহায় সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার চিকিৎসা সহায়তায় এগিয়ে আসার আহবান
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে শোকাবহ উপলক্ষে দোয়া ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সোনামসজিদ স্থলবন্দরে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ৩ হাজার ভারতীয়’র দেশে ফিরতে বাধা
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বিদ্যুৎ মিস্ত্রিরির মৃত্যু

আরও খবর

Designed & Developed Bartaman ICT